Tuesday, July 18, 2023

৭ই মার্চের ভাষন ও বংগবন্ধুকে ছূয়ে দেখার টুকরো গল্প-কথা।

 

 

৭ই মার্চের ভাষন ও বংগবন্ধুকে ছূয়ে দেখার টুকরো গল্প-কথা (গল্প নয় সত্যি)।

 
আমার জীবনের স্মরণীয় কিছু গল্পগুচ্ছ আকারে উপস্থাপন করব বলে মনে করি, কিন্তু সময় হয়ে উঠেনা। অনেক সময় দেখা যায়, সেই স্মৃতিকথা মনে করলে খুব কষ্ট লাগে আবার কখনো খুব ভালো লাগে। মনে হয়, যদি আবার সেই সময় গুলো ফিরে আসতো আমার জীবনে বা আমি ফিরে যেতে পারতাম আবার জীবন অতীতে।
 
১৯৭১ সন। আমার বয়স সেই সময়ে ৯/১০ বছর হবে, তখন একদিন দেখি সবাই রেসকোর্স ময়দানে যাবে বড় ছোট অনেকেই মানুষ যাচ্ছে কিন্তু রেসকোর্স তো আমি চিনি না আমারও যেতে ইচ্ছা করে। সেখানে কি হবে ? সেখানে শেখ মুজিবর রহমান ভাষণ দিবেন বাংগালী জাতির মুক্তির জন্য। তারিখ ছিল ৭ই মার্চ ১৯৭১ সাল । আমার শ্রদ্ধেয় বাবা মরহুম শেখ মো: মোবারক আলী তখন ইস্ট পাকিস্তান পোষ্টাল ডিপার্টমেন্টে সুপারিনটেন্ডেন্ট পদে চাকুরী করতেন। সেই সুবাদে তিনি ইস্ট পাকিস্তান পোষ্টাল ইউনিয়নের নির্বাচিত জেনারেল সেক্রেটারী ছিলেন। তখন সরকারী অফিস টাইম ছিল সকাল ৭.০০ থেকে দুপুর ২.০০ টা পর্যন্ত। আমি হঠাৎ একদিন দেখলাম দুপুরের পর আমার বাবা পাঞ্জাবী-পায়জামা পড়ে রওনা দিয়েছেন কোথাও যাচ্ছেন।আমার মনে হলো, তিনিও হয়তো রেসকোর্স ময়দানে যাবেন। 
 
তখন খিলগাঁও তিলপাপাড়া দিয়ে খিলগাও রেলগেইট থেকে কোন রাস্তা ছিল না, আমরা গুলিস্তান বা মতিঝিল বা সদরঘাট অন্যান্য দিকে যেতে হলে, পায়ে হেটে বাসাবো রেল ক্রসিং(বর্তমানে এর অস্তিত্ত নেই, বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, তদস্থলে একটি ফুট ওভার ব্রিজ করা হয়েছে) পার হয়ে শাহজাহানপুর এর ভিতর দিয়ে কলোনির মধ্য পথ দিয়ে মতিঝিল সেন্ট্রাল গভমেন্ট হাইস্কুলের সামনে এসে বড় রাস্তায় মূল যাত্রা করতে হতো। তারপর তিলপাপাড়া থেকে আরেকটা রাস্তা ছিল সেটা হল, খিলগাঁও ৮০ ফুট রাস্তা দিয়ে পশ্চিম দিকে শাজাহানপুর রেলগেট নামে ছোট লেভেল ক্রসিং পার হয়ে রেললাইন ঘেঁষে (এখন খিলগাঁও বাজারে ভিতরে পড়েছে রাস্তাটা)রাস্তা ধরে গিয়ে ইনকাম ট্যাক্স কলোনি হয়ে মতিঝিল সেন্ট্রাল গভমেন্ট হাইস্কুলের সামনে এসে ডানে/বামে বড় রাস্তা দিয়ে বড় গাড়ি চলাচল করতো, বড় গাড়ি বাস মানে কাঠবডি মুড়ির টিন। তখন এই রাস্তা দিয়ে লোকাল বাসে (মুড়ির টিনে) করে আমরা সবাই রামপুরা থেকে খিলগাঁও হয়ে সদরঘাট যাতায়াত করতাম। তো পায়ে হেঁটে যোগাযোগের জন্য বাসাবো রেল ক্রসিং পার হয়ে আমরা চলে যেতাম ঐ পথ ধরে মতিঝিল রাজপথে। 
 
গল্পে ফিরি, আমার বাবা যাচ্ছেন, অন্যান্য লোকদের সাথে মিলে আমি বাবাকে ফলো করতে থাকলাম, মতিঝিল সেন্ট্রাল গভমেন্ট হাইস্কুলের ডানদিকে মির্জা আব্বাসের বাড়ির সামনে থেকে সোজা পশ্চিম দিকে রাজারবাগের রাজপথ ধরে হাঁটতে থাকলাম। শত শত মানুষ রাস্তায় পায়ে হেঁটে চলেছে রেসকোর্স ময়দানের উদ্দেশ্যে । তখন শাহজাহানপুর ভিতর দিয়ে রোডটা ছিল না, বাবাকে ফলো করে আমি রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের সামনের রাস্তা দিয়ে ফকিরাপুল বাজারের ভিতর দিয়ে সোজা মতিঝিল ১৬তলা বিল্ডিং বরাবর মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার বড় রাস্তায় উঠে গেলাম। সেখান থেকে একটু ডানে গেলেই দৈনিক পাকিস্তান খবরের কাগজের অফিস (যেটা বর্তমানে দৈনিক বাংলার মোড় বলে) আমি বড় রাস্তায় উঠে হাজার হাজার মানুষ দেখতে পেয়ে ভয় পেয়ে গেলাম। আমি পিছন থেকে ‘বাবা, বাবা, আমি যাব, আমি যাব’ এ কথা বলে চিৎকার করতে থাকি হঠাৎ আমার বাবা পিছন দিকে তাকিয়ে দেখে আমি তাকে ফলো করছি। তখন বাবা অবাক হয়ে গেল কিরে তুই আমার সাথে আসতেছিস কেন ? তা আমি বললাম, আমি ভাষণ শুনতে যাব, তখন দুপুর আড়াইটা হয়ে গেছে পিজ ঢালা পথ গরম তাপ ছড়াচ্ছে। কোন গাড়ি নেই হরতাল/বন্ধের ডাক দেয়া হয়েছে তাই। বাবার সাথে আমি হাটছি, পিস ঢালা পথ গরম হয়ে গেছে, আমার পায়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেল ছিল। নিরুপায় হয়ে বাবা আমাকে হাত ধরে সামনে নিয়ে চললেন। আমার মনে পড়ল, প্রেসক্লাবের সামনে আমরা আসি, তারপর বিজয়নগর পার হয়ে সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংয়ের ডান পাশ দিয়ে হাইকোর্টের সামনে গেলাম। তখন বাবা আমার হাত জোড় করে শক্তভাবে ধরে রেখেছেন, যেন আমি ছুটে না যাই। আমি চারিদিক দেখছিলাম আর রোমান্চিত হচ্ছিলাম। তারপর যেতে যেতে রমনা পার্কের কাছে এলাম যেটা রমনা পার্ক বাম পাশে হাইকোর্টের সামনের বড় পথ ধরে আমরা সামনের দিকে চললাম। 
 
ঘোড়া দৌড়ের রেসকোর্স ময়দান ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট এর পাশে অবস্থিত ছিল। একটু সামনে গিয়ে দিয়ে বড় কাঠের বেড়ার নিচ দিয়ে ফাঁক গলিয়ে আমরা অন্যান্য মানুষের সাথে আমরাও ঢুকে পরলাম মাঠের মধ্যে। সেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ এসেছে, আমরা লক্ষ মানুষের কাছে গিয়ে বসলাম। খোলা ঘাসের মাঠ, বসা তো নয় মানে অনেকটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবাই ভাষণ শুনতে ছিলাম (ইতিমধ্যে ভাষণ শুরু হয়ে গিয়েছে)। অনেকক্ষণ আমি আকাশের দিকে থাকলাম, বিদেশীরা হেলিকপ্টার দিয়ে ভিডিও করতেছে, জনগণের উপর চক্কর দিতেছে। জীবনে প্রথম কাছে থেকে উড়ন্ত হেলিকপ্টার দেখলাম। আমার বাবার পাশে একজন ভদ্রলোক ছিলেন, দেখতে সুন্দর, অনেক হ্যান্ডসাম লম্বা ছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, বাবু তুমি তোমার আব্বুর সাথে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে এসেছ ? আমি বললাম, হ্যা। তিনি বরলেন, তোমার তো অনেক সাহস ! আমি বললাম, ওই যে মাইকের মধ্যে বক্তৃতা দিতেছে আমি ওই মানুষটারেকে দেখবf, উনি কোথায় তখন কথা বলেন ? ঐ ভদ্রলোক আমাকে উচু করে উপড়ে তুলে ধরে তার ঘাড়ের উপরে বসালেন এবং বললেন, ওই যে দূরে ডান দিকে মঞ্চের উপর সাদা পাঞ্জাবীর উপড় কালো কোট পড়া, একজন হাত উঁচু করে জোরে জোরে বক্তৃতা করতেছেন উনি শেখ মুজিবুর রহমান, উনি আমাদের নেতা, উনি পাকিস্তানী সরকারের বিরুদ্ধে আমাদেরকে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন । তখন প্রায় বিকাল গড়িয়ে গেছে, শেখ মুজিবুর রহমান বরলেন, “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দিব, এদশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।“ আমি অবাক হয়ে গেলাম, বক্তৃতা শুনে মন শিহরিত হলো। তাহলে আমরা পারধীন আছি ? আমার মনের মধ্যে একটা বাসনা জাগলো, এই লোকটাকে যদি আমি সামনে থেকে দেখতে পারতাম। এরই মধ্যে কখন জানি অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেল। বক্তৃতা শেষ হয়ে গেলে সবাই বাইরের দিকে ছুট তে লাগলো। বাবা আমাকে জোর করে হাতে ধরে রাখলেন, যাতে করে আমি হারিয়ে না যাই। তারপর আমি যেহেতু ছোট ছিলাম বড় বড় মানুষের ভীরে আমি আশেপাশে কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না শুধু আকাশ দেখছিলাম। বাবার ধরা হাতে পিছু পিছু দ্রুত বাবার সাথে হেঁটে চলছি, বাবা আমাকে ধরে রেখেছেন তারপর আমার আর কিছু মনে নাই হাঁটতে হাঁটতে আমরা কোন দিক দিয়ে যে আবার খিলগাঁর বাড়ীতে এসেছি আমার সেটা মনে করতে পারছি না । আমার মনে হয়, রাত হয়ে গিয়েছিল, এক সময় দেখলাম আমি বাবার সাথে বাসায় গেটের সামনে চলে এসেছি। চারিদিক অন্ধকার নেমে আসছে। তখন আমাদের এলাকায় ইলেকট্রিসিটি লাইন বসেনি তাই রাস্তায় তেমন আলো ছিল না। 
 
তারপর স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হল ১৯৭১ সনের ২৬শে মার্চ। আমরা আমাদের খিলগাঁয়ের বাড়ীতে ছিলাম প্রায় সারা যুদ্ধের বছর। তারপর দেশ স্বাধীন হলো, ১৯৭২ সালে স্কুলে আমাদের সবাইকে অটো-প্রমোশন দেয়া হলো, ক্লাশ এইটে উঠলাম। বংগবন্ধূ শেখ মুজিবর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে বাংলাদেশে চলে এলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের হাল ধরলেন, শাসনভার গ্রহণ করলেন। রেডিওতে প্রতিদনি বংগবন্ধূর ভাষনের খন্ড বক্তৃতাংশ প্রচার করা হতো। 
 
এর মধ্যে আমি স্কুলে ১৯৭৪ সালে নিউ টেন ক্লাসে উঠলাম। তখন সারাদেশে বন্যা, ঢাকা শহর ডুবে গিয়েছিল কোন লেখাপড়া ছিল না। আমাদের রেশন কার্ড দিয়ে চাল, গম, চিনি উঠানো, এটিই আমার ডিউটি ছিল। তখন খিলগাও এ নৌকা করে এদিক সেদিক যেতে হতো । 
 
হঠাৎ একদিন শুনি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের খিলগাও এ স্কুল ভিজিটে ত্রান কার্যক্রম দেখতে আসবেন। আমাদের স্কুলের আগের হেডমাস্টার ছিলেন মিসির আলি স্যার।তিনি পরবর্তীতে এই এলাকার আমাদের এলাকার সংসদের এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি খিলগাও মডেল কলেজ স্থাপন করেন।বঙ্গবন্ধু তাকে খুব ভালবাসতেন, তার অনুরোধে খিলগাও মডেল হাইস্কুলে বঙ্গবন্ধু আসবেন। যেই শুনা, সেই কাজ। আমি আগেই বিষয়টি লোক মুখে বিষয়টি জনেছিলাম। আমাদের তিলপাপাড়তে এখন যে ‘ঢাকা হোটেল’ হয়েছে, এর পাশে জোরপুকুর নামে একটা পুকুর ছিল, সে পুকুরের ডান পাশে একটি রেসের ঘোড়া পালতো, আমি ওই বাড়ির পাশ দিয়ে কোমর সমান পানি ভেঙে ৮০ ফুট রাস্তা দিয়ে আমি খিলগাও মডেল স্কুলের মেইনগেট দিয়ে ভিতরে ঢুকি। অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধু আসবে বলে, তো আমি গেটের সামনে দু’ধারে দাঁড়ানোর জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গেইট দিয়ে ঢুকছেন, তখন দেখলাম পাশে আমাদের মিসির আলি স্যার আছেন। দুই পাশে দুইটা পুলিশ ছিল, বঙ্গবন্ধু পায়ে হেঁটে হাটুর উপর পর্যন্ত তার পানি ছিল সেভাবে তিনি স্কুলে ঢুকেছিলেন। আমি হঠাৎ দৌড়ে পানি ভেংগে তার সামনে গিয়ে আমার দুই হাতে তার ডান হাত ধরে হ্যান্ডশেক করি আর বঙ্গবন্ধুকে বলি, আমি আমার আব্বার সাথে গিয়ে আপনার ৭ই মার্চের ভাষণ রেসকোর্স ময়দানে গিয়ে শুনেছি । তখন বঙ্গবন্ধু আমার মাথায় চুলের মধ্যে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো, এতো পানির মধ্যে আমাকে দেখতে এসেছ? তখন পুলিশ এসে আমাকে বলল, যাও তুমি পাশে গিয়ে দাঁড়াও (আমার সাথে কেউ কোন খারাপ ব্যবহার করেনি)। বিষয়টা তখন আমার কাছে খুবই স্বাভাবিক মনে হয়েছে। তো বঙ্গবন্ধুর সাথে হ্যান্ডশেক করার সময় আমার মনে হল, “তার হাতটা বিশাল বড়, আমি ছোট মানুষ দুই হাত দিয়ে তার সাথে হ্যান্ডশেক করেছি আর তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন” এই স্মৃতিটা আমার জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা বলে আমি মনে করি। 
 
এতদিন পর ১৯৭৫ সনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে যখন আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো তার সাথে সাথে ইন্টারনেটের যুগ চলে আসলো। সবাই ফেসবুক, লিংকেডইন, ব্লগার সাইট, আরো অনেক ধরনের ডিজিটাল ব্যবহার করতে শুরু করলো, আমিও ফেসবুকে আমার আইডি খুললাম, তো দেখলাম ৭ই মার্চের ভাষণে আমরা তখন টেলিভিশনে সাদা কালো বক্তৃতা দেখেছিলাম।বর্তমানে তো দেখলাম, সাদাকালো ভিডিও এটা রঙিন করা হয়েছে। সেই ভিডিওটা আপলোড করা হয়েছে, আমি স্মৃতি কাতর হয়ে সেই ফেলে আসা বাবার সাথে রেসকোর্স ময়দানে ৭ই মার্চের বক্তৃতা শোনার বিষয়টা বারবার আমার মনে উদিত হতে লাগলো। সেই অনুপ্রেরণা থেকে আমি ফেসবুকে একটা পোস্ট দিলাম তো ভাবলাম সে পোস্টটা খুব ছোট ছিল। এখন এতদিন পরে আমার মনে হলো, আমার জীবনে গল্প রয়েছে, আমার বন্ধুরা, সহপাঠীরা বা ফেসবুকের ফলোয়াররা আমার এই ঘটনাটা কিভাবে নেবে জানিনা। তবে আমার বাবা যেহেতু রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, তিনি ইস্ট পাকিস্তান পোস্টাল ইউনিয়ন এর জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। বাবার মুখে শূনতাম- বঙ্গবন্ধুর সাথে তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল, যোগাযোগ ছিল । তো সেই সুবাদে উনি প্রায়ই ৩২ নম্বর ধানমন্ডি বাড়িতে যাতায়াত করতেন। তো আমি এতদিন পরে মনে করি, আমি ইতিহাসের ছোট একটি অংশের সাক্ষী, সেরা মানব যারা পৃথিবীতে এখন বেঁচে নেই কিন্তু অমর হয়ে আছেন। এবং তারা দেশব্যাপী সমাদৃত ইতিহাসের অংশ, আমি সেই ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখেছিলাম কাছে থেকে, হাত দিয়ে স্পর্শ করে। আজ অনেকেই নিজেকে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক পরিচয় দিয়ে নিজেদের জাহির করেন।আমার বয়সী অনেকে আছেন, তারা কি কখনো বঙ্গবন্ধুকে স্বচক্ষে দেখেছিলেন? হয়তো না কিন্তু অনেককেই এমনভাবে রাজনীতিতে বক্তৃতা করতে দেখি যে, মনে হয় তারা বঙ্গবন্ধুকে কাছে থেকে ছূয়ে দেখেছিলেন আমার মতন । সারা বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের মধ্যে হয়তো কয়েকজন সরাসরি বঙ্গবন্ধুর সাথে থেকে ১৯৭১ সনের ৭ই মার্চের ভাষণ শুনেছিল। আমার জীবনে কোন এক সময় ঢাকা শহরে বঙ্গবন্ধুকে কাছে থেকে ছুঁয়ে দেখেছিলাম। সেই সুবাদে আমি মনে করি, আমি একটি ইতিহাসের অলিখিত অজানা ছোট একটা অংশ। খুব ভালো লাগে, এ বিষয়গুলো যখন আমি স্মৃতিচারণ করি। ভাবতে এত ভালো লাগে যে, সত্যি আমি যদি তখন রাজনীতিতে জড়িত হতাম আমি অনেক বড় পদে আজ অধিষ্ঠিত থাকতাম, যেহেতু আমি একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আমার কর্ম জীবন শেষ করেছি তাই রাজনীতি করার সুযোগ আমার আর হয়নি। তবে আমি বাংলাদেশকে ভালবাসি, ছূয়ে দেখা বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসি। যেহেতু তাকে আমি ছুঁয়ে দেখেছি, বঙ্গবন্ধু বাস্তবে কি ছিলেন যারা কোনদিন বঙ্গবন্ধুকে দেখেননি, ছুঁয়ে দেখা তো দূরের কথা। তারা লোকমুখে শুনে বা পারিবারিক মত অনুসরন করে দল করেন, তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে অনেক কথা বলেন কিন্তু নিজেরা সে আদর্শ কোনদিনও নিজেদেরকে জীবনপথে চালিত করতে পারেন না। আমার মনে হয়, যেটা অনেকটা অতিরিক্ত অতিরঞ্জিত লোক দেখানো আবেগ প্রকাশের নামান্তর মাত্র। 
 
আমার মনে হল, আমার জীবনের এই গুচ্ছগল্পের ঘটনাটি লিখে যাই, এই ছোট গল্পটি আমার পরবর্তী প্রজন্ম যাতে পড়ে জানতে পারে আমরা স্বাধীনতার একটা যুদ্ধের অংশ ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার পরিবার তথা বাবা নিজ পেশায় থেকে রাজনীতিতে সমর্থন যুগিয়েছেন। বাবার মুখে শুনেছি, পাকিস্তান তথা পরবর্তীতে বাংলাদেশ আমলে বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন চার নেতার একজন জনাব কামরুজ্জামান। সত্যি আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি, রাজনীতি না করেও বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ইতিহাসের আমি একটা ছোট অংশ হতে পেরেছি। এতাদিন পর মনে হয়, উপরের ঘটনাটি আমার জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় ছিল, যা আমার স্মৃতির ভান্ডারকে রোমাঞ্চকর করেছে বলে আমি করি। 
 
লেখক: এস,এম, নজরুল ইসলাম।
তারিখ: ১৯-০৭-২০২৩খ্রি:।
(প্রথম ভয়েস টাইপিংয়ে লেখা)

No comments:

Post a Comment

এপোলো-১১ মিশনে অংশ নেয়া চাঁদের মাটিতে ঘুরে আসা লাল মানুষ দেখার শৈশব স্মৃতি।

এপোলো-১১ মিশনে অংশ নেয়া চাঁদের মাটিতে ঘুরে আসা লাল মানুষ দেখার শৈশব স্মৃতি। আমার শৈশবের কথা বলতে গেলে আমি প্রায়ই নস্টালজিয়াতে ভোগি। আজকে আ...