Tuesday, July 18, 2023

'আজমেরী জাহান তাসনিম' এর অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর সংবাদ ।

 

 

 আমার সেঝো বোন কামরুন নাহার বিকাল ৪.০ টার দিকে অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে। সে ফোনে আমাকে জানালো, মেঝ আপার মেয়ে 'তাসনিম' নাকি মারা গেছে! আমরা যাচ্ছি, আপানি আমাদের সাথে মিরপুর 'তাসনিম'দের বাসায় যাবেন ? এমন একটি অপ্রত্যশিত মৃত্যুর সংবাদ শুনে মাথাটা ব্যাথায় ভারি হয়ে উঠলো, আমি কখনোই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পূর্ব থেকে অসুস্থ্যাতার কোন খবর নেই, ভাবিনি হঠাৎ করেই কাউকে না জানিয়ে তাসনিম এভাবে আমাদের ছেড়ে যাবে, সাজানো ভালবাসার সুখী সংসার আর তার একমাত্র ৫ বছরের ছেলে জেইন-কে একা রেখে অসময়ে, এতো অল্প বয়সে না ফেরার দেশে চলে যাবে! 
 
আল্লাহ তার স্বভাবিক মৃত্যু দিলে, সে কতো কথাই না বলে যেত আমাদের! ভাগ্যমতে সময় পেলে সে হয়তো অনেক কিছুই বলে যেত, তার কাছাকাছি থাকা প্রিয় মা বদরুন নাহারকে, প্রিয় ভাই মিনহাজুল হক সবুজকে, প্রিয় সন্তান জেইনকে আর প্রিয় স্বামী নাহিদ হাসানকে। তাইতো মানতে পারছিলাম না আদরের ভাগ্নির অসময়ে কাউকে কিছু না বলে এই কষ্টকর বিদায় নেয়াটা।
 
ভাবতে কষ্ট লাগছে - আমার মেঝ বোনের আদরের একমাত্র মেয়ে, আমার ভাগ্নি আজমেরী জাহান তাসনিম কখনোই মিস্টি কন্ঠে মামা বলে আমাকে আর ডাকবে না, সে প্রতিদিনের মজার মজার আর আপটডেট পোষ্ট করবে না, ছেলে জেইনকে নিয়ে নানা ধরনের হোম ভিডিও ক্লিপের স্টোরীও আর পোষ্ট দিবে না ফেইসবুকে.....। 
 
অনেকবার ভেবেছি- অনেকদিন হয় তাসনিমের সাথে সামনাসামনি দেখা হয়না, বহু ব্যস্ততার মাঝেও একদিন সময় করে মিরপুরে তাসনিমকে দেখতে যাব। আর যাওয়া হলো না, আর দেখাও হলো না আমাদের দু’জনার। এই জীবনে, আমাদের দেখা হওয়ার সম্ভাবনাও আর অবশিষ্ট রইলো না। আমরা একবারও চিন্তা করি না প্রিয়জনদেরকে মাঝে মাঝে দেখা দেয়া, একান্তভাবে সময় দেয়া কতটা প্রয়োজন। আফসোস, এভাবে অপূর্ণ থেকে যায় হৃদয় ডালির ভালবাসা, আদর ও স্নেহ, যা মৃত্যুর কারনে ছিন্ন হলেই নিজেদের অক্ষমতা প্রকাশ করি আর চোখের জলে সময়কে দোষ দেই। তাইতো আমি কখনই আর তাসনিমকে ফোনে কল করতে পারব না, আমি কখনই তাকে আর মেসেজ দিতে পারব না, ফেসবুকে তাকে আর কোন কিছু শেয়ার করতে পারব না! তবুও আমরা বেচে আছি বলে, চোখের জলে নীরবে মানতে হচ্ছে আজমেরী জাহান তাসনিম এর চিরদিনের জন্য এই চলে যাওয়া। ঘরে-বাইরে স্বজন মহলে সে ছিল একটি প্রিয় মুখ, সবাই তাকে খুবই ভালবাসতো। তাইতো বড় ভাই ও স্বামীর আইডিতে ফেসবুক পোষ্টে দেখা যায়, তাসনিমের প্রিয় মানুষগুলো অন্তরের ভালবাসা প্রকাশ করছে, প্রান খুলে দোয়া করছে, তার আত্নার মাগফেরাত কমানা করছে। তার মৃত্যুতে মন ভীষন ভারাক্রান্ত ও ব্যথিত ছিল, শোক কাটিয়ে কিছু লিখতে পারছিলাম না।
 
গত ২৯শে আগষ্ট,২০২১ তারিখ বিকেলে তাসনিমের মৃত্যুর খবরে পেয়ে আমরা সকলে খিরগাও তিলপাপাড়া থেকে শেষ বারের মতো তাসিনিম-কে দেখতে ও বিদায় জানাতে গিয়েছিলাম তার শ্বশুরালয়ে, স্বামী নাহিদ হাসানের ঢাকাস্থ মিরপুর, পল্লবী, পলাশনগরের বাড়ীতে। বাড়ীর অনতিদূরে স্থানীয় পলাশনগর জামে মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষনা করা হচ্ছিল- মরহুমার শ্বশূরের নাম, সাথে তার ছোট ছেলে নাহিদের স্ত্রীর মৃত্যুর সংবাদ ও মরহুমার জানাজা নামাজের সময়। শোক সংবাদ শূনে মহল্লাবাসী, আত্নীয়-স্বজন আসছে সমবেদনা জানাতে। সত্যি বিশ্বাস করতে হলো, আমাদের আদরের ভাগ্নি আজমেরী জাহান তাসনিম ইন্তেকাল করেছে। জানলাম, হাসপাতালের ডাক্তার বলেছে- সিভিয়ার পেটের ব্যাথা থেকে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং একই সাথে বমি হওয়ায় পর ‘সাডেন কার্ডিয়াক এরেষ্ট’ হওয়ায় হার্ট ফেইল করে তার অপ্রত্যাশিত মৃত্যু হয়েছে। ডাক্তারী ভাষায় যাই বলা হউক না কেন, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর আদেশে তার চলে যাওয়ার সময় হয়েছে বলেই পরপারের উদ্দেশ্যে এই মৃত্যু-যাত্রা। হঠাৎ মৃত্যুর নির্ধারিত উছিলাতে মা-মনি আজমেরী জাহান তাসনিম আত্নীয়-স্বজন কাউকেই কোন প্রকার কষ্ট না দিয়ে নীরবে এই পৃখিবীতে নশ্বর দেহ ত্যাগ করে চিরকালের জন্য পরপারের ঠিকানায় চলে গেছে অনন্তকালের জন্য। কষ্টদায়ক হলে সত্যি যে, এভাবেই সম্ভাবনাময় একটি জীবনের ও একটি অসমাপ্ত গল্পের যবনিকা হলো।
 
২৯শে আগষ্ট,২০২১ তারিখ দিবাগত রাতে পলাশনগর কেন্দ্রিয় জামে মসজিদে এশা'র ফরজ নামাজের পর মরহুমার জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হলো। মসজিদ সংলগ্ন পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত ছোট পরিসরের ওয়াকফকৃত পলাশ নগর কবরস্থানে রাত প্রায় ৯.০০ টার সময় মসজিদের ইমাম সাহেবের নির্দেশনা মতে মরহুমার ভাই সবুজ ও স্বামী নাহিদ লাশ কবরে রাখলো এবং মুসলিম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী অত্যন্ত সম্মানের সাথে মরহুমা আজমেরী জাহান তাসনিমকে সমাহিত করা হলো। পরকালের দীর্ঘ যাত্রায় সামিল হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলো আমাদের মা-মনি। সকলে মরহুমার কবরের উপর এক মুষ্ঠি করে মাটি দিলাম এবং সকলে মিলিত ভাবে মরহুমার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করলাম। 
 
আমরা আজ আবার সকলে মিলিত ভাবে মরহুমা আজমেরী জাহান তাসনিম এর রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া করি। প্রার্থনায় দোয়া করি, আল্লাহ যেন মরহুমার সকল জানা-অজানা গোনাহ মাফ করে দেন। পৃথিবীতে থাকাকালীন কল্যানকর ভাল কাজের জন্য আল্লাহ তাকে যেন পুরস্কৃত করেন। তার জীবিত স্বজনদের এই শোক সইবার ও সহ্য করার ক্ষমাত দেন। আল্লাহ যেন তার আত্নাকে জান্নাতে থাকার সুযোগ করে দেন। ইহ-জগতে তার রেখে যাওয়া একমাত্র ছেলে জেইন যেন সুন্দরভাবে বাবা, দাদা-দাদী, নানী, মামা ও স্বজনদের অবারিত প্রকৃত আদর, স্নেহ, ভালবাসায় বেড়ে উঠে। আল্লাহর ইচ্ছায় ছেলে জেইন যেন সুস্থ্যতার সাথে দীর্ঘ নেক হায়াত পায়। মায়ের শোক যেন তার জীবন চলার পথে বাধা হয়ে না দাড়ায়। আমাদের সকলকে যেহেতেু নির্ধারিত সময়ে আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে, তাই আল্লাহ তার মহান ইচ্ছায় মুসলিম হিসাবে আমাদের সকলকে যেন সম্মানজনক মৃত্যু দান করেন। আমীন।
 
- মেঝ মামা, এস. এম. নজরুল ইসলাম, খিলগাও (তিলপাপাড়া), ঢাকা।
 
 
 
 
 
২০২২ সালের ২৯শে আগস্ট ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে মেঝ বোনের মরহুমা কন্যা মা-মনি তাসনিমকে স্মরন করছি। আল্লাহ তোমাকে জান্নাত দান করুন..................
 
“নি:শব্দে তোমায় খুজি সব স্মৃতির মাঝে”
************************************
কবি : এস, এম, নজরুল ইসলাম।
রচনাকাল : ১১-০৯-২০২১খ্রি:।
 
দূরের আলোতে তুমি থাকো আকাশে
গো-ধুলি প্রান্তে, নীলিমা জুড়ে।
হৃদয় ঘরের প্রধান ফটকে অপেক্ষা,
হয়তো তোমার আসার কলিং বেল বেজে উঠবে।
 
এই বুঝি তুমি ফিরে এলে আবার….......
হৃদয় পথে ছুটে যাই বাড়ীর ফটকে,
নি:শব্দে তোমায় খুজি সব স্মৃতির মাঝে।
 
সম্মুখ নয়নে সকলই ফাকা,
কি করে ছবির এলবামে লুকিয়ে গেলে ?
তোমার জন্য পৃথিবী আজ নিয়েছে বিদায়।
 
তবু তোমার টুকরো ছায়ায়,
ডুবে আছে কত মিথ্যে আগুন,
অন্ধকারময়,কত স্মৃতি, কত সময়।
তোমার জন্য পৃথিবীতে আজকে ছুটির রোদ।
 
নিজেদের মাঝে তোমার খোঁজে,
শুধু আকাশ পানে তাকিয়ে থাকা,
নীলিমায় সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে
যদি তুমি হেসে উঠ আবার ফিরতি পথে।
 
জাগ্রত শ্রুতিতে, তোমার কোলাহল নেই,
বাধানো ফ্রেমে নির্বাক তুমি চারিদিকে নিস্তব্ধতা।
তাসনিম তুমি নেই, হারিয়েছ অনন্ত তিমিরে,
আজি সবকিছুতেই হৃদয়ের অব্যক্ত কষ্টের বারতা।
 
©কপিরাইট সংরক্ষিত (লেখক কর্তৃক)
ফটো ক্রেডিট: সায়মা শারমিন সূমি।
 

No comments:

Post a Comment

এপোলো-১১ মিশনে অংশ নেয়া চাঁদের মাটিতে ঘুরে আসা লাল মানুষ দেখার শৈশব স্মৃতি।

এপোলো-১১ মিশনে অংশ নেয়া চাঁদের মাটিতে ঘুরে আসা লাল মানুষ দেখার শৈশব স্মৃতি। আমার শৈশবের কথা বলতে গেলে আমি প্রায়ই নস্টালজিয়াতে ভোগি। আজকে আ...