



স্মৃতির পাতায় ঢাকাতে ১৯৮৮ সনের ভয়াবহ বন্যার দিনগুলি
উপরের সংগৃহীত ছবিগুলি ১৯৮৮ সনের দেশব্যাপী বন্যার সময়কালের খিলগাও তালতলা মার্কেট, গোড়ান বাজার, বাসাবো, খিলগাও সি-ব্লক এলাকা থেকে তোলা হয়েছে।
ছবিগুলি বন্যার সময়কার আমার স্মৃতির পাতা্র অতীত বাস্তবতা। তখন আমার নিজ পরিবারের সকল সদস্যরা ঢাকার মিরপুর-১০ এ বসবাস করতো। আমি ঐ সময় একা খিলগাও এ অবস্থান করছিলাম। ১৯৮৮ সনের বন্যার সময় খিলগাও এলাকার প্রতিটি পাকা রাস্তায় গাড়ীর ইন্জিন পানিতে ডুবে যেত বলে কোন গাড়ি চলাচল করতো না। ঐ সময় খিলগাও রেইলগেটের পুর্ব (তিলপাপাড়া রোড) ও উত্তর (৮০ ফুট রোড) দিকের ঢালু পাকা রাস্তাতে ২টি অস্থায়ী নৌকা ঘাট হয়েছিল। নৌকা চালকরা ডেকে ডেকে নৌকায় বিভিন্ন গন্তব্যের পেসেন্জার তুলতো।
খিলগাও, তিলপাপাড়া ৭নং রোডে অবস্থিত আমাদের নিজেদের বাড়ী ২২৩নং এ ও বড় বোনের ২১৫ নং টিনশেড বাসার ভিতরে কোমর সমান পানি উঠেছিল। ফলে সকল ভাড়াটিয়ারা নিরাপদ স্থানে চলে গিয়েছিল। মাঝে মাঝে খিলগাও রেইলগেট থেকে আমি আমাদের বাসা দেখতে যেতাম। কোষা নৌকায় যাওয়া ও খিলগাও রেইলগেট ফিরতি আসা ৫+৫ টাকা। নৌকা থেকে বাড়ী দেখতাম, বাড়ীর ভিতর ঢোকা সম্ভব হতো না। কখনো আবার ২/৩ জন মিলে পাকা রাস্তায় কোমড় সমান পানি ভেংগে আমাদের ও বড় বোনের বাড়ীর ভিতরে দেখে আসতাম।
তখন কম্পিউটার ট্রেনিং ক্লাশ করার জন্য খিলগাও রেইলগেট থেকে মতিঝিল বিআইডব্লিওটিসি ভবনে বন্ধু মতিনুর রহমানের অফিসে যেতাম ঠেলাগাড়ীতে জনপ্রতি ভাড়া ১০ টাকা করে। শাহজাহানপুর-রাজারবাগ মোড় থেকে সমগ্র মতিঝিল পানিতে ডুবে গিয়েছিল। তাই বন্যার সময় আমারা সবাই এমন ভাবেই শহরের ভিতরে যাতায়াতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম।
বিগত ১৯৮৮ সনের বন্যার সময় আমি খিলগাও রেইলগেট সংলগ্ন একটি ভবনে এক পরিচিত জনের বাসায় ও ঘনিষ্টজন ডা: আব্দুুর রব ভাইয়ের ঔষধের দোকানে ১৫ দিনের মতো শেয়ারিং করে রাত যাপন করেছি আর খাবার খেয়েছি হোটেলে। সেই ১৯৮৮ সনের বন্যার সময় ডা: আব্দুুর রব ভাইয়ের এক মেয়ের জন্ম হয়েছিল, তাই তার নাম রাখা হয়েছিল নাসরিন জাহান ওরফে 'বন্যা'।
চারিদিকে পানি আর পানি, কোথাও বেড়ানোর জায়গা ছিল না তাই প্রতিদিন বিকেল বেলা রেইলগেট সংলগ্ন দোতলায় হোমিও ঔষধের দোকান 'শারমিন হোমিও হল' এর সামনে বসে মানুষের কোলাহল ও নৌকায় যাতায়াত দেখতাম।
এই ১৯৮৮-র বন্যা ছিলো বাংলাদেশে সংঘটিত প্রলংকারী বন্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে সংঘটিত এই বন্যায় দেশের প্রায় ৬০% এলাকা ডুবে যায় এবং স্থানভেদে এই বন্যাটি ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী ছিলো। এটি ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক ও ক্ষয়-ক্ষতিময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সেই বন্যার দিনগুলিতে ভাসমানভাবে বসবাসকারী সকলের সাথে আমার ফেলে আসা খুব মনে পড়ে।
ঐ বন্যার সময়টা ছিল আমার জীবন ঘনিষ্ঠ স্মৃতিময় এক রোমান্চকর কাহিনী।
No comments:
Post a Comment