Saturday, November 5, 2022

"শিকল বন্দি বানর জীবন" VS "রিমোট কন্ট্রোল রোবট" ।

 


এস,এম, নজরুল ইসলামের জীবন ঘনিষ্ট টুকরো গল্প-কথা (০২)

May be an image of 3 people, animal and outdoors  May be an image of 2 people

"শিকল বন্দি বানর জীবন" VS "রিমোট কন্ট্রোল রোবট" 

লেখক: এস, এম, নজরুল ইসলাম। প্রকাশের তারিখ: ০৭-১১-২০২২ খ্রি:।

আপনারা নিশ্চয় দেশের বিভিন্ন হাট-বাজার-মহল্লায়, খোলা জায়গায় প্রশিক্ষিত বানর দিয়ে পাবলিকদের খেলা দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করতে দেখেছেন।আমি তাদের নিয়ে একটু আলোচনা করবো।
 
আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, ঐ সকল বানরের মালিক যে সকল বন্য বানর দিয়ে খেলা দেখায় সেগুলিকে প্রকৃতির বানর সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে শিশুকাল থেকে পোষ মানিয়ে ট্রেইন্ড-আপ করানো হয়। বন্য বানর সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে এই বানরগুলির মগজে মানুষ্য সমাজে সহবসবাসের মেন্টালিটি তৈরী করা হয়। আর অর্থ আদায়ের জন্য সময়ে সময়ে ট্রেনিংয়ের নামে অত্যাচার করে শিক্ষাতে রপ্ত করা হয়। পরবর্তীতে মানুষ নিজেদের স্বার্থে পোষা বানরগুলি দিয়ে লোকালয়ের বিভিন্ন স্থানে খেলা দেখোনোর সময়, বানরগুলিকে সময়ে সময়ে কিছু মৌখিক, হাতের লাঠি দিয়ে মাটিতে আঘাত করে বা শব্দভিত্তিক নির্দেশনা দেয়া হয় এবং বানরগুলি তা খেয়াল করে তার মালিকের ট্রেনিং মতে নির্দেশগুলি প্রতিপালন করে উপস্থিত দর্শকদের মনোরন্জন করে থাকে। পরবর্তীতে বানরের মালিক নিজে ভিক্ষা না করে ঐ বানরগুলিকে দিয়ে দর্শকদের কাছে হাত পেতে বকশিশ/টাকা বা ভিক্ষা চাওয়ার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। মালিকের নির্দেশ না মানলে পরবর্তিতে হয়তো তাদেরকে অনাহারে থাকতে হতে পারে বা অত্যাচারের শিকার হতে পারে। তাই ভয়ে সব নির্দেশ প্রতিপালন করা ছাড়া উপায় থাকে না।
 
আপনি জ্ঞানী হলে একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন যে, এখানেই টোটাল পারফরমেন্সের জন্য বানরের কোন ক্রেডিট নেই, সকল ক্রেডিটই প্রাপ্য ঐ বানরের দড়ি/শেকল হাতে ধরা লোকটির যে পিছন থেকে সকল কল-কাঠি নাড়ছে আর বানরগুলিকে কন্ট্রোল করছে। কারন শিশুকাল থেকে বানরগুলিকে এমনভাবে শিক্ষা দেয়া হয় যে বানরগুলি মালিকের কথার অবাধ্য হতে সাহস করে না কখনো।আর সে যে একটি বানর প্রজাতির চতুর প্রানি এটাও সে ভুলে যেতে বাধ্য হয় কারন শাস্তির ভয়, খাবার প্রদান কন্ট্রোল, যেখানে সেখানে মুক্তভাবে অবাধ চলাচল করার বিষয়টি বানরের কল্পনারও বাইরের থাকে! বানর মনে করে সে ছুটে পালাতে চাইলেও মালিক তাকে ধরে ফেলবে আর মারধর করবে শাস্তি দিবে তাই সে পালাতেও সাহস সন্চয় করতে পারে না।
 
মনেবিজ্ঞানের ভাষায়, দীর্ঘদিন যাবত নিজস্ব স্বভাব বিরোধী লাইফ প্র্যাকটিসের ফলে এই সকল প্রানিগুলির মুক্ত বিবেক, বুদ্ধি অনেকটা লোপ পায়। পৃথিবীতে যে একটা মুক্ত বানর সমাজ আছে তা বানরগুলিকে শিশুকাল থেকেই ভুলিয়ে দেয়া হয়। তাই চেষ্টা করলেও বন্দি বানরগুলি কোনদিনও আর ফিরে যেতে পারে না স্বাভাবিক জংগল জীবনে অথবা তাদের মুক্ত বানর সমাজে। এই বানরগুলি হতাশায় দ্বিধাগ্রস্ত থাকে, কোনক্রমে ফিরে যেতে পারলেও হয়তো তাদেরকে আর তাদের বানর সমাজে সহজভাবে গ্রহন নাও করতে পারে। তাছাড়া মুক্তভাবে বাঁচতে গেলে যে শক্তি, বুদ্ধি, সামজিক জ্ঞান, শক্তি ও সাহস দরকার, বয়সের তুলনায় সেগুলি তাদের মধ্যে অভাব থাকে। বানরটি বিজাতীয় মানুষ সমাজে নিজস্ব বন্চিত সমাজ ব্যবস্থাহীন পরিবেশে বেড়ে উঠায় তার দেহে ও মনে তৈরী হয়ে উঠে না নিজ জাতীয় স্বাধীন স্বত্তার।
 
বর্তমানে একই রকম ঘটনারই যে পূনরাবৃতির ঘটছে আমাদের সমাজের বহু সংসারে তা অনেক বাবারা বুঝেও বুঝে না যে, নিজ স্ত্রী তথা মায়ের কারনে তাদের সন্তানগুলি শিকল বন্দি বানর জীবনের মতো বেড়ে উঠছে বা উঠেছে। পক্ষান্তরে ‘শিকল বন্দি বানর জীবন’ কথাটা বেশ পুরানো তাই বর্তমানে এই কথাগুলির স্থলে আধুনিক ‘রিমোট কন্ট্রোল রোবট মানকি” এর কথাগুলি উল্লেখ করা যেতে পারে। 
 
এবার বলবো এই গল্পের প্রভাব আমাদের সংসার জীবনে কিভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে? উপরের শিকল বন্দি বানরের গল্প কিন্তু আমাদের সমাজে প্রায়শ: দেখতে পাবেন। সংসারে অনেক বাবারা কোনদিনও তার সন্তানের এই অধ:পতনের উৎস খুজে পায় না, কারন বাবারা মর্যাদাগতভাবে মানবিক ও মূল্যায়নের দিক দিয়ে অবমূল্যায়িত হওয়ায় তাদের স্ত্রীর উপর ১০০% নির্ভরশীল থাকে। ফলে সংসারের গোপন অনেক বিষয়ই শ্বশুরবাড়ীর লোকজন ছাড়া বাবাকে কখনোই লোভি ও আত্নকেন্দ্রিক মায়েরা তা বলে না বা এরুপ ঘটনা অস্বীকার করে। আর এভাবেই চলতে থাকে মূল্যবোধের অবক্ষয়। আর এভাবে ক্ষয়ে যাওয়া সংসার নাটক শেষ দৃশ্য অবধি চলতে থাকে, যতক্ষন না ছেলের নিজের নতুন বিবাহিত সংসারে আগুন লেগে তার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে ধ্বংস না হয়। মূর্খ, আত্নকেন্দ্রিক ও অপরিনামদর্শী মায়েদের লোভে কি পরিনাম ধ্বংস আর ক্ষতি হয় এইসব ছেলেদের জীবনে ও সংসারে, যা ভাষায় প্রকাশের কোন স্বস্তি থাকে না।
 
কাছে থেকে দেখা এরকম দু'টি পরিবারের কাহিনী বলবো আজ। 
 
 কিছুদিন আগের ঘটনা, ফ্যামিলিটি আমাদের বাড়ীতে ভাড়া থাকতো। ভদ্রলোকের পরিবার খুবই ধার্মিক প্রকৃতির। তার একটি বিবাহিত মেয়ে ও তার নাতনি নিজেদের সাথে বসবাস করতো। ঐ বিবাহিত মেয়েটি দেখতে খুব সুন্দরী ও শিক্ষিতা ছিল। কেউ বুঝতেই পারবে না এই বিবাহিত মেয়েটির দূর্বিসহ জীবনের গল্প কতটুকু কষ্টকর ।
 
অসমাপ্ত...লেখা শেষ হয়নি....... চলবে।
 
ফটো ক্রেডিট: ShutterStock, Google.

No comments:

Post a Comment

এপোলো-১১ মিশনে অংশ নেয়া চাঁদের মাটিতে ঘুরে আসা লাল মানুষ দেখার শৈশব স্মৃতি।

এপোলো-১১ মিশনে অংশ নেয়া চাঁদের মাটিতে ঘুরে আসা লাল মানুষ দেখার শৈশব স্মৃতি। আমার শৈশবের কথা বলতে গেলে আমি প্রায়ই নস্টালজিয়াতে ভোগি। আজকে আ...