Thursday, July 20, 2023

এপোলো-১১ মিশনে অংশ নেয়া চাঁদের মাটিতে ঘুরে আসা লাল মানুষ দেখার শৈশব স্মৃতি।


এপোলো-১১ মিশনে অংশ নেয়া চাঁদের মাটিতে ঘুরে আসা লাল মানুষ দেখার শৈশব স্মৃতি।

আমার শৈশবের কথা বলতে গেলে আমি প্রায়ই নস্টালজিয়াতে ভোগি। আজকে আমি আমার শৈশবের একটি ঘটনা বলব। অ্যাপোলো ১১: সফল চন্দ্রাভিযানের গল্পে আমার শৈশব স্মৃতি।

ইতিহাস থেকে আমরা জানি, অ্যাপোলো-১১ এর চন্দ্রাভিযানের সম্পূর্ণ কাহিনী। অ্যাপোলো-১১ প্রথম মনুষ্যবাহী মহাকাশ অভিযান ছিল, যা চাঁদে অবতরণ করে। এটি অ্যাপোলো প্রোগ্রামের ৫ম মহাকাশ অভিযাত্রা যাতে নভোচারীরা অংশ গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৬৯ খ্রীস্টাব্দের জুলাই ১৬ তারিখে এই অভিযানের সূচনা হয় এবং ২৪শে জুলাই শেষ হয়। এই অভিযানে অংশ নেন দলপতি নীল আর্মস্ট্রং, কমান্ড মডিউল চালক মাইকেল কলিন্স, এবং চান্দ্র অবতরণযানের চালক ছিলেন বাজ অলড্রিন।

আমি তখন খিলগাও প্রাইমারি স্কুলে ক্লাস ফাইভে পড়ি। আমাদের তিলপাপাড়া এলাকায় মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের বাস ছিল বেশী। এলাকায় দুই ঘর ধনী ছিল কিন্তু তাদের রক্ষনশীলতার কারনে আমরা তাদের বাড়ী যেতাম না। এলাকায় আর তেমন কোন ধনী পরিবার ছিল না যাতে করে আমরা তাদের বাসায় গিয়ে টিভি দেখতে পারি। তখন মহল্লায় টিভির মালিক বলতে ধনী পরিবার ছাড়া সাধারণ পরিবারে টেলিভিশন ক্রয় করার ক্ষমতা চিন্তারও বাইরে ছিল ।

এই সময় আমেরিকার নাসা ঠিক করেছে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে জুলাই ১৬ তারিখ কেনেডি স্পেস সেন্টারের LC 39A, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেখাবে চন্দ্রাভিযানের প্রোগাম। আমার স্কুলের ছোট বন্ধু পাশের বাড়ীর আ: বারেককে নিয়ে খুঁজতে থাকলাম কোথায় টেলিভিশন দেখা যাবে বা কোন বাড়ীওয়ালা সকলের জন্য টিভি দেখার সুযোগ উন্মুক্ত করে দিবে । বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করার পর জানতে পারলাম বাসাবোতে একটা বাড়ির সামনে পাকা রাস্তার মধ্যে একটি বড় কাঠের টেবিলের উপর বড় সাদাকালো টিভি সেট স্থাপন করেছে। যাতে করে চন্দ্র অভিযানের সরাসরি লাইভ মহল্লার মানুষ দেখতে পারে। সেই বাড়ীটি ছিল খিলগাও তিলপাপাড়া থেকে সোজা কালভার্ট পেরিয়ে দক্ষিণ দিকে গিয়ে হাতের বামে "হিরাঝিল" নামক একটা দোতালা বাড়ির সামনে। পাকা রাস্তার মধ্যে টেবিলের উপর পূর্বমূখী করে বড় একটা সাদা কালো টিভি সেট বসানো হয়েছে । বাড়িটি এখন নেই, ভেঙে বহুতল এপার্টমেন্ট ভবন করা হয়েছে। ঐ স্থান থেকে একটু সামনে গিয়ে হাতের ডানে গেলে বাসাবো খেলার মাঠ পড়বে। সকলের জায়গাটা সহজে চিনবার জন্য একটু বিবরণ দিলাম ।

আমরা দুই বন্ধু সকাল ৯-১০টার সময় ওই বাড়ীর গেলাম। টেলিভিষন খোলা আছে, সামনে বসে আছে ছোট ছেলে-মেয়েরা, তারপর পিছনে বড়রা এবং যারা মাটিতে বসতে চাইনি তারা দাঁড়িয়ে পিছনে থেকে টিভি দেখার জন্য ভিড় করেছিল। পাকিস্তান টিভিতে ঘোষণা হল, কিছুক্ষণের মধ্যে সরাসরি আমরা আমেরিকার সম্প্রচার কেন্দ্র থেকে মহাকাশযান এর যাত্রা অনুষ্ঠান দেখতে পাবো । আমরা অধীর আগ্রহে সবাই উৎসুকভাবে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকলাম । তারপর একসময় টিভির পর্দায় ভেসে উঠল যেই আমেরিকার নভোস্টেশন। সেখান থেকে ইংরেজিতে ধারাভাষ্য দেওয়া হচ্ছে, মাঝে মাঝে কন্ট্রোলিং সেন্টারে বিজ্ঞানীরা বসে আছে তাদেরকে দেখানো হচ্ছে। একসময় রকেট চালু করা হলো, চারিদিকে ভীষণ ধোঁয়া ছড়িয়ে রকেটটি আকাশের উপরের চলতে শুরু করল। আকাশের উপরের দিকে কিছুক্ষণ পর দেখলাম, কিছু সময় পর পর রকেটের নিম্নের অংশগুলো খসে পড়ছে। আস্তে আস্তে রকেটটি ছোট হয়ে গেল এবং ওখান থেকে পিছনে নিচে ক্যামেরা দিয়ে দেখানো হচ্ছে আমাদের পৃথিবী কত দূরে? এভাবে বেশ সময় পর চলার পর রকেটটা চাঁদের উপর প্রদিক্ষন শুরু করলো। এক সময় পরে রকেটটি ছাদের পৃষ্ঠে নামলো, চাঁদে প্রথম নিল আর্মসস্ট্রং নামলেন । চাঁদের মাটিতে পৃথবী মানুষ প্রথম পা রাখলেন। তারপর দ্বিতীয় নভোচারী। তারপর তারা আমেরিকার পতাকা গ্রথিত করলেন চাঁদের মাটিতে। তারা মাটি সংগ্রহ করলেন আবার রকেটে ফিরে এলেন। তারপর কিছুসময় বাদে প্রোগাম বন্ধ হয়ে গেল, টিভির মালিক টিভি বন্ধ করে দিয়ে বললেন, আজকের প্রোগ্রাম শেষ হয়েছে । আমার কাছে বিষয়টা সিনেমা দেখার মতো লাগলো। ঘটনাটি আমার মনে খুব একটা দাগ কাটেনি।


পরবর্তীতে পরের দিন পত্রিকাতে প্রথম পাতায় ফলাও করে চাঁদের অভিযানে এপোলো-১১ এর বিশাল ভীষণ ফিচার দেওয়া হলো। তারপর বড়দের মুখে শুনলাম ঐ রকেটিট পৃথীবিতে ফিরে এসেছে। আমরা চাঁদের কথা প্রায় ভুলে গেলাম। স্কুলে যাই রীতিমতো প্রতিদিনের রুটিন অনুযায়ী। সেটা সম্ভবত সেই বছরের অর্থাৎ ১৯৬৯ সনের অক্টোবর মাসে কথা, স্কুল থেকে শিক্ষক বললেন- চাঁদে যাওয়ার অভিযানের তিনজন নভোচারী আমেরিকা থেকে পূর্ব পাকিস্তান সফরে, শুভেচ্ছা জানাতে আসবেন । এসেই বিশেষ শুভেচ্ছা সফরের অংশ হিসেবে তারা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে দর্শন দেবেন । সরকারী নির্দেশ মতো সব স্কুল থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের স্বশরীরে নভোচারীদের দেখানোর জন্য প্রোগ্রাম করা হ’ল । আমাদের স্কুল থেকে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী যারা যেতে ইচ্ছুক সবাইকে জানানো হলো। বিষয়টারত শর্ত দেয়া হলো, স্কুলের সাদা ড্রেস পরিহিত থাকতে হবে সবাইকে, নইলে কাউকে এলাও করা হবে না । ধার্য হলো নভোচারীদের আগমনের দিন, স্কুল থেকে তেজগাঁও এয়ারপোর্টের রাস্তায় স্কুলের তত্ত্বাবধানে ওখানে স্টুডেন্টদের নেয়া হবে। আবার নভোচারীদের শুভেচ্ছা/সাক্ষাত জ্ঞাপনের পরে ছাত্র-ছাত্রীদের আবার বাসে করে স্কুলে ফিরিয়ে আনা হবে। ঐ দিন যে আমি প্রোগ্রামে যাব, আমার কোন স্কুল ড্রেস নাই, তবে ড্রেসটা হতে হবে সাদা শার্ট সাদা প্যান্ট, জুতা। এখন কি উপায় আমার মেঝ বোন বাদরুন নাহার মিতার স্কুল ড্রেস আছে কিন্তু আমার নেই। আমি কান্না শুরু করে দিলাম । আমার স্কুল ড্রেস করে দাও, মা বললেন একদিনে স্কুল ড্রেস করা সম্ভব নয়। মা কাকে যেন বললো, তুই দেখ না তোর বান্ধবীর কোন ভাইয়ের কোন ড্রেস আছে কিনা তা যোগাড় করে দিতে ? তা আমার মেঝ বোন সিপাহীবাগের গিয়ে তার বান্ধবীর বাসায় গেল। তার এক ছোট ভাই আমার ১ বছরের বড় খিলগাও সরকারী হাই স্কুলে পড়তো, তাদের স্কুল ড্রেস সাদা শার্ট সাদা পেন্ট। তো সেদিন সে অনুষ্ঠানে যাবে না, তাই আমার বোন তার বান্ধবীকে অনুরোধ করল যে, তোমার ভাইয়ের ড্রেসটা দাও আমার ছোট ভাইটা সেটা পরিধান করে আগামীকাল স্কুলের প্রোগ্রামে নভোচারীদের দেখতে যাবে। আমার বোনের বান্ধবী রাজি হল এবং তার ছোট ভাইয়ের স্কুল ড্রেসটা আমাকে দিল সাদা শার্ট সাদা প্যান্ট । আমি চিকন ছিলাম,প্যান্টটা কোমড়ে লুজ হচ্ছিল বেল্ট দিয়ে একটু টাইট করে বেধে দিয়েছিল। তো সেখান থেকে আমরা স্কুলে আসি, স্কুলে আসার পর স্কুল টিচার আমাদেরকে গাড়িতে উঠান। তখনকার সময়ে যে বাসগুলি সদরঘাট থেকে খিলগাও হয়ে রামপুরা রোডে চলাচল করতো এমন ৩টি বাসে আমাদের নেয়া হয়েছিল। এখন আমরা যাদেরকে স্মৃতিচারন করতে গিয়ে কাঠবডি মুড়ির টিনের বাস বলি। স্কুলের স্যার আমাদের সবাইকে নাম ধরে লিস্ট করে বাসে উঠালেন, বাস চলতে শুরু করল রামপুরা বতৃমানের আবুল হোটেল মোড় হয়ে মালিবাগ দিয়ে সেই বাস বাংলা মোটর, পরে ডানের রাস্তায় বাংলা মটর হয়ে সোজা ফার্মগেটের দিকে গেল। 
Apollo-11 Worldwide Tour, Dacca, East Pakistan,October 1969.
ভিডিও Credit : The ATTIC room/NASA/Science Photo Library

তারপর ফার্মগেট হয়ে তেজগাঁও এয়ারপোর্টের নিকটে ড্রাম ফ্যাক্টরীর সামনের রাজপথের পূর্ব পাশে স্টুডেন্টদের নামিয়ে দিল। আমরা স্কুলের সব ছাত্রছাত্রী একটা গ্রুপে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম । বেলা ১২.৩০ টার দিকে একটা সুন্দর খোলা বড় ট্যাক্সিতে করে তিনজন নভোচারী মটর শোভাযাত্রায় তেজগাঁও এয়ারপোর্টের রাজপথ ধরে আমাদের পাশ দিয়ে ধীরে ধীরে চলে গেল। তারা তিনজন নভোচারী ট্যাক্সির মাঝখানে দাঁড়িয়ে দুই পাশের জনতাকে হাসিমুখে অভিনন্দন জানাতে জানাতে গাড়ি সামনে চলে গেল। আমি জীবনে প্রথম বিদেশী কোনো সাদা মানুষকে দেখলাম, তাদেরকে লাল মানুষ হিসেবে আমার কাছে মনে হলো । পরে ফিরতি যাত্রায় স্কুলের স্যারকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, স্যার চাঁদে গেলে কি মানুষ লাল হয়ে যায় ? আসলে আমি জীবনে প্রথম কোন পশ্চিমা সাদা মানুষ দেখেছি তো, তাই আমার কাছে তাদেরকে লাল মানুষ মনে হয়েছে, অনেকটা ভিনগ্রহের মানুষদের মতো । আবার আমাদের স্কুলে ফিরিয়ে নিয়ে আসলে বিকাল বেলা, এখান থেকে আমরা যার যার বাসায় চলে যাই ।

 
         আমাদের স্কুল থেকে গিয়ে ঢাকার পুরান এয়ারপোর্ট রোডে দাড়িয়ে Apollo-11 
         মিশনের যে ৩জন নভোচারীদেরকে ১৯৬৯ সনে দেখেছিলাম। ছবিতে বাম 
         থেকে ডানে: আর্মস্ট্রং, কলিন্স, অলড্রিন।

 
          ঢাকার পুরান এয়ারপোর্ট রোডে Apollo-11 মিশনের ৩জন নভোচারীকে 
          দেখার ভীর, ১৯৬৯ সন। 

আমাদের বাসায় এসে আমি বড় আপাকে এবং মাকে জিজ্ঞেস করি, মা যারা চাঁদে যায় তারা কি লাল মানুষ হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে ? তো আমার মা আর বড় আপা সামসুন নাহার খুব মুচকি হাসলেন। বড় আপা বললেন, তুই আরো বড় হলে ইতিহাস পড়লে জানতে পারবি- আসলে নভোচারীরা সকলে ইংরেজ বংশধর ছিল। যদিও তাদের বর্তমানে আমেরিকার নাগরিক বলা হয়। এই বৃটিশ/ইংরেজরা ভারতকে দখল করে বিগত ২০০ বছর শাষন করেছে। তারা ইংরেজ জাতির বংশধর, ইংরেজিতে তাদের বলে হোয়াইট ককেশিয়ান। আর পাকিস্তানের গরম আবহাওয়াতে তাদেরকে ঐ রকম হঠাৎ লাল মানুষ মনে হয়েছে তোর কাছে। যেহেতু আমি জীবনে প্রথম আমেরিকান ইংরেজ দেখেছিতো তাই হয়তো তাদের গায়ের রঙটা ঠিক উপলব্ধি করতে পারিনি।

পরের দিন স্কুলে গিয়ে মেজো বোনের কাছে তার বান্ধবীর ভাইয়ের স্কুল ড্রেসটা ধুয়ে শুঁকিয়ে ফেরত দেই। এমন একটি স্কুলে পড়তাম সেখানে ছাত্র-ছাত্রিরা বাড়ির ফ্যামিলির মতো ইচ্ছামত ড্রেস পড়ে স্কুলে যেত। স্কুলে ড্রেসের কোন বাধ্যবাধকতা ছিল না। পরে বুঝেছি স্কুল ড্রেস পড়ে থাকলে ছাত্র ছাত্রীর দেখতে কত সুন্দর লাগে, বুঝা যায় তারা খুব স্মার্ট । কিন্তু আমি খিলগাঁও মডেল হাই স্কুলের প্রাইমারী শাখার ছাত্র ছিলাম বলেই আমার স্কুল ড্রেস ছিল না।
ব্যক্তি জীবনে সরকারী চাকুরী থেকে ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হিসেবে অবসর নেয়ায় বেশ অফুরন্ত সময় হাতে এলো। অবসর সময়ে আমি অনলাইনে কিছু লেখালেখি করার চেষ্টা করলাম, ব্লগার হিসেবে কিছু লেখালেখি শুরু করলাম। যা এখন আমার ফেসবুক আইডিতে, সেই ব্লগিং সাইটের প্রায়ই লিংক দেওয়া থাকে আমার গল্পগুচ্ছ, কবিতা, মিউজিক্যাল লিরিক্স পড়ার লিংক দেয়া থাকে।আমি মাঝে মাঝে অনেক ধরনের কনটেন্ট তৈরি করি ফলোয়ারদের জন্য পোষ্ট করি। আমি যখন আমার জীবনের ছোট ছোট ঘটনার গল্প গুলি লিখতে শুরু করলাম, আমার টাইপ করতে খুব কষ্ট হতো। পরে তখন গুগুলের সর্বশেষ ভার্ষনে কিছুদিন আগে ভয়েস টাইপিং সিস্টেম চালু করলো আর এখন আমার খুব ভালো লাগছে, সময় কষ্ট দু’টোই বেচে যায়।অল্প কষ্টে অল্প সময়ে আমি আমার গল্পগুলো বলে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। এখন আমরা গল্প বলছি, ৫৩ বছর আগে সাদা কাল টিভিতে আমাদের রোমাঞ্চিত হওয়ার অনুভূতিগুলো কি রকম ছিল। যা এখনকার ছেলে মেয়েরা হয়তো বিশ্বাসই করতে চাইবে না, হেসে উড়িয়ে দিবে। তারা বলবে ওটা খুবই সাধারণ ব্যাপার ছিল । বর্তমানের ডিজিটাল যুগে সবকিছু সহজ আর হাতের মুঠেতে। কিন্তু তখন আমাদের কাছে বিষয়গুলো অনেক অসাধারণ ছিল, বিশ্বাসের বাইরে ছিল প্রত্যেকটি ঘটনা। কারণ আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারে ছিলাম আর তাই যারা একটু ধনী শ্রেণী পরিবার ছিল তাদের বাড়িতে গিয়ে আমরা অনুরোধে তাদের বাসায় গিয়ে টিভি দেখতাম। ভালো কোনো প্রোগ্রাম হলে আমরা দল বেধে তাদের বাড়িতে গিয়ে টিভি দেখতাম। ওঐ পরিবারগুলি বিরক্ত হলে, জানালা দিয়েও টিভি দেখেছি। অনেক সময় টেলিভিশন প্রোগ্রাম দেখতাম, উপভোগ করতাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। আজ এত বছর পর যখনই চন্দ্র অভিযানের কথা কোথাও আলোচনা হয় আমার মনে পড়ে যায় শৈশবে আমরা কিভাবে সরাসরি চন্দ্র অভিযানের প্রোগ্রাম টা দেখেছিলাম খুবই সাদামাটা ভাবে। এখনকার ছেলেমেয়েরা, আগের সেই প্রোগ্রামগুলো সাদা কালো প্রোগ্রাম কালার করা ভিডিও রেডিমেড দেখতে পায় তার কাছে বিষয়গুলো খুবই সাধারণ মনে হয়। কিন্তু তখনকার সময় সেটা খুবই অসাধারণ ছিল ।

আজ এত বছর পর শৈশবের সেই ঘটনাগুলো আমাদের কাছে রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছে। কিভাবে আমরা সেই ঘটনাগুলো দেখেছিলাম, অনুভব করেছিলাম, আজকের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য হলো বলেই কিছু ঘটনা উল্লেখ করে লিখে ব্লগ সাইডে আমি উপস্থাপন করলাম । হয়তো এই অংশটা ফেসবুকে আমার ফলোয়াররা জানতে পারবে । কারন সেই সময় সরাসরি পূর্ব পাকিস্তান পরবর্তীতে বাংলাদেশের জনগণ হয়ে আমরা সরাসরি আমেরিকান প্রোগ্রাম দেখে চন্দ্র অভিযানের সাথে নিজেদের সরাসরি আপডেট করতে পেরেছিলাম। সত্যি একটি রোমাঞ্চকর বিষয় ছিল এবং তা আমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা বটে । সবাইকে আমার ছোট বেলার কাহিনীটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

লেখক: এস,এম, নজরুল ইসলাম।
তারিখ: ১৯শে জুলাই,২০২৩।
(ভয়েস টা্ইপিংয়ে লেখা)
==============================

চাঁদে মানুষ যাওয়ার ৫০ বছর।

১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই থেকে ২০ জুলাই সমাপ্ত হওয়া অ্যাপোলো ১১ এর চাঁদে সফল অভিযান আজও মানবজাতির এক বিস্ময়। সেদিন ৩ নভোচারীর মাইলফলক অর্জনের পেছনে লুকিয়ে আছে কিছু অজানা গল্প।
অর্ধ শতক আগে চাঁদে পা রাখার সময় মার্কিন নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং বলেছিলেন, ‘মানুষের জন্য একটি ছোট্ট পদক্ষেপ, কিন্তু মানবজাতির বিশাল এক অর্জন’। ওই অভিযানের প্রতিকূলতাগুলো থেকেই আর্মস্ট্রংয়ের বক্তব্যের গুরুত্ব বোঝা যায়।
অ্যাপোলো ১১ মিশনে যে কম্পিউটার সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছিল, তা আকারে বড় হলেও এখনকার মোবাইল ফোন তার চেয়ে হাজারগুণ শক্তিশালী। মিশনে ব্যবহার করা ‘স্যাটার্ন-ফাইভ’ রকেটটি ছিল সে সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী মহাকাশযান।
তারপরও চাঁদে অবতরণের আগে জ্বালানি নিয়ে বিপত্তি বাঁধে। ফিরতি যাত্রার জন্য জ্বালানি ফুরিয়ে নভোচারী আর্মস্ট্রং ও অলড্রিনের মৃত্যুর আশঙ্কাও ছিল।
চাঁদে পা রাখা প্রথম ব্যক্তি নিল আর্মস্ট্রংয়ের কাছে নভোচারীদের জন্য নির্ধারিত বীমা করার মতো প্রয়োজনীয় অর্থ ছিল না। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে পরিবারের কাছে অটোগ্রাফযুক্ত কয়েকশ’ কাগজ রেখে যান আর্মস্ট্রং। ভেবেছিলেন, পৃথিবীতে ফিরে না আসতে পারলে অটোগ্রাফ নিলাম করে অর্থ পাবে পরিবার।
ঐতিহাসিক অভিযানের পরও ৩ নভোচারী ক্যাপ্টেন পদে নির্ধারিত বেতনের বাইরে কোনো ভাতা পাননি।
চাঁদে ২১ ঘণ্টা অবস্থান করে ২২ কেজি পাথর ও মাটি নিয়ে ফেরেন ৩ নভোচারী। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জাদুঘর ও গবেষণাগারে কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে নমুনাগুলো।
অ্যাপোলো ১১ মিশনের সময় চাঁদে উজ্জ্বল প্রতিফলক রেখে আসেন নভোচারীরা। আজও ওই প্রতিফলকে লেজার রশ্মি ফেলে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব নির্ণয় করা হয়।
নভোচারীদের জীবনের ঝুঁকির বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। তাই তিনি শোকাবহ একটি ভাষণও প্রস্তুত রেখেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্ববাসীকে সফল চন্দ্রাভিযানের খবরই জানান প্রেসিডেন্ট নিক্সন।

সূত্র্র: চ্যানেল আই অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত প্রতিবেদন,
প্রথম প্রকাশ: ১৮ জুলাই, ২০১৯, পুন:প্রকাশ: বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০২৩।

Wednesday, July 19, 2023

নিজের গভীরে আমি, অন্তরে অন্তরে!

 

নিজের গভীরে আমি, অন্তরে অন্তরে!

আমার জন্মস্হান বিক্রমপুরের শ্রীনগর উপজেলার 'ব্রাহ্মনখোলা' নামক একটি অখ্যাত গ্রামে। তবে বর্তমানে আমি ঢাকা শহর কেন্দ্রে পৈত্রিক বাড়ীতে স্হায়ীভাবে বাস করছি । একটি শেখ পরিবারে আমার জন্ম তাই পদবী নিয়ে আমার নাম শেখ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (S.M. Nazrul Islam)। কর্মজীবনে সরকারী কর্মকর্তা ছিলাম। বর্তমানে শখের পেশা - আমি একজন ফ্রিল্যান্সার, ব্লগার, কনটেন্ট রাইটার, গীতিকার, সুরকার ও এমেচার সিংগার।

অবসরে, সময় সুযোগে অন-লাইনে লেখালিখি করি। যেন আমার পরেও লেখাগুলি আগামী দিনের জন্য সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু আমি অন-লাইন থেকে কোন প্রচার বা উপার্জনের চেষ্টা করিনা। আমি খুবই সংগীত প্রিয় একজন মানুষ। আমার গভীরে আমি, আমি কেমন মানুষ ? জীবনে ভাল লাগা/মন্দ লাগার বিষয়টা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তনশীল। আমার ভাল লাগা/মন্দ লাগার বিষয়ে যা আমি অন্তরে ধারন করি:
শখের বিষয়: নিজের কথায় নিজের সুরে গান করা ও বাগান করা।
প্রথম লেখা: একটি লিরিক (সম্পূর্ন গানের কথা লিখতে ৬মাস লেগেছিল)।
প্রথম শিক্ষক: বড় বোন সামসুন নাহার।
বেশী ভালবাসি: মাকে ।
মানুষ পছন্দ হয়: নিষ্পাপ শিশূদের।
সৌন্দর্য্যের পূজারী: প্রকৃতি ও সুন্দর মানব/সুন্দরী মানবীর সৌন্দর্য্য দেখে বিমোহিত হলে।
জীবনী পছন্দ: মহামানব ও মনিষীদের জীবনী।
পছন্দের রং: ফিরোজা/নীল ।
পছন্দের ফুল: গোলাপ/গন্ধরাজ।
পছন্দের ফল: আম ও কলা।
পছন্দের খাবার: ভাত-মাছ।
সেরা কবি (কাব্যগ্রন্থ): কবি নজরুল ইসলাম।
সেরা লেখক (উপন্যাস): নীহার রন্জন গূপ্ত।
পছন্দের উপন্যাস: কড়ি দিয়ে কিনলাম।
পড়াশুনার বিষয়: ধর্ম,কল্যানকর প্রযুক্তি/সফটওয়ার, অজানা রহস্য,মহাকাশ ও সমূদ্র।
পছন্দের লেখা: নিজের কবিতা/লিরিকস/জীবনের গল্পগূচ্ছ।
নিজস্ব ব্লগ সাইট: www.blogger.com/profile/18129982803879256478
নিজ প্রফেশনাল সাইট: www.linkedin.com/in/recentbd
অতীত কর্ম সংস্থা: বিসিআইসি, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা। www.bcic.gov.bd
পছন্দের সিনেমা: এন আনফরগটেবল অ্যটাম (মংগোলিয়ান কিশোর প্রেমের গল্প)।
নিজ এলাকা: ঢাকা'র খিলগাও।
পৃথিবীতে আগমন: ১২ই জানুয়ারী।
ভাল লাগার দিন: ১লা বৈশাখ/১লা ফাল্গুন।
বেদনার দিন: ১৮ই রমজান (মায়ের মৃত্যুর দিন)।
আমার দোষচক্র: আমার সত্য ও ন্যয় কথা কেউ বিশ্বাস না করলে রেগে যাই।
যা ভালো লাগে: নতুন লিরিকে, নতুন সুরে মিউজিক সৃষ্টিতে।
ঘৃণার চোখে দেখি: মিথ্যুক,স্বার্থবাদী, প্রতারক, অকৃতজ্ঞ ও গাদ্দারকে।
সন্দেহের চোখে দেখি: যে সকল মহিলারা চকচকে ইমিটেশন গহনার মতো নিজের উজ্জলতা প্রকাশে বেশী সচেষ্ট হয়।
যা বিরক্ত লাগে: মিথ্যা বলে ইনবক্সে/ফোনে কেউ টাকা চাইলে।
যা রাগ সৃষ্টি করে: মিথ্যা কথা বললে ও মিথ্যা বদনাম করলে।
রাগের বহি:প্রকাশ: অনলাইনে আনফ্রেন্ড করি/ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রকাশ করি।
বিশ্বাস ভংগ করলে: আত্নীয় কিংবা অনাত্নীয় যে কাউকে পছন্দের তালিকা থেকে বাদ দেই, প্রয়োজনে সম্পর্কচ্ছেদ করি।
মন খারাপ থাকলে: একাকী থাকি, গান শুনি/গান গাই।
কষ্ট প্রকাশ করি: ঘটনা প্রবাহ/কবিতা/গল্প/গান লিখে।
যখন দু:খ হয়: প্রিয়জন কেউ ভুল বোঝলে।
অসূস্থ্য হলে: পৃথিবীর সব অর্জন মুল্যহীন মনে হয়। অসম্পূর্ন কাজগুলির কথা মনে পড়ে।
স্মৃতির বছর: ১৯৭১ (বাবার সাথে রেসকোর্স ময়দানে ৭ই মার্চের ভাষন শোনা ও মুক্তিযুদ্ধ), ১৯৭৪ (বন্যা ও স্কুল ভিজিটে আসা বংগবন্ধুর সাথে হেন্ডশেক) ও ১৯৮৮ সনের বন্যা।
অতীত স্মরনে: দিনগুলি আর ফিরবে না ভেবে কষ্ট লাগে, সেই স্মৃতির মানুষগুলিকে আবার দেখতে ও জায়গাগুলি ভ্রমনে ইচ্ছা জাগে।
মন ভালো থাকলে: বন্ধুদের খোজ নেই/একা ঘুরতে বের হই।
উপদেশ প্রদানে: অপরের কল্যানে সর্বদা সৎ উপদেশ দেই ।
মনে প্রশান্তি হয়: দূস্থ: ও অসহায় মানুষদেরকে মুক্ত হস্তে দান করলে।
যে স্বপ্ন দেখি: দূস্থ: ও অসহায়দের জন্য একটি চ্যারিটি ফাউন্ডেশন গড়ে তুলবো।
সারাংশে: জীবনে বেশীর সময় একাকী চলতে চলতে আমার পৃথিবী খুবই আইসোলেটেড, পছন্দের বন্ধু-বান্ধব হাতে গোনা দু'চারটে। এই আমি আপন স্বত্তাকে অনেক ভালবাসি; অপরকে অন্ধ অনুসরন করতে ভাল লাগে না, আত্ন-অহংকারী নীচু মনের মানুষকে এড়িয়ে চলি, মূল্যহীন গাল-গপ্প করে সময়ের অপচয় না করে বিশ্রাম নেয়া উত্তম মনে করি, সহজে খারাপের সাথে নিজেকে মিশতে দেই না।
@এস,এম, নজরুল ইসলাম



Tuesday, July 18, 2023

'আজমেরী জাহান তাসনিম' এর অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর সংবাদ ।

 

 

 আমার সেঝো বোন কামরুন নাহার বিকাল ৪.০ টার দিকে অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে। সে ফোনে আমাকে জানালো, মেঝ আপার মেয়ে 'তাসনিম' নাকি মারা গেছে! আমরা যাচ্ছি, আপানি আমাদের সাথে মিরপুর 'তাসনিম'দের বাসায় যাবেন ? এমন একটি অপ্রত্যশিত মৃত্যুর সংবাদ শুনে মাথাটা ব্যাথায় ভারি হয়ে উঠলো, আমি কখনোই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পূর্ব থেকে অসুস্থ্যাতার কোন খবর নেই, ভাবিনি হঠাৎ করেই কাউকে না জানিয়ে তাসনিম এভাবে আমাদের ছেড়ে যাবে, সাজানো ভালবাসার সুখী সংসার আর তার একমাত্র ৫ বছরের ছেলে জেইন-কে একা রেখে অসময়ে, এতো অল্প বয়সে না ফেরার দেশে চলে যাবে! 
 
আল্লাহ তার স্বভাবিক মৃত্যু দিলে, সে কতো কথাই না বলে যেত আমাদের! ভাগ্যমতে সময় পেলে সে হয়তো অনেক কিছুই বলে যেত, তার কাছাকাছি থাকা প্রিয় মা বদরুন নাহারকে, প্রিয় ভাই মিনহাজুল হক সবুজকে, প্রিয় সন্তান জেইনকে আর প্রিয় স্বামী নাহিদ হাসানকে। তাইতো মানতে পারছিলাম না আদরের ভাগ্নির অসময়ে কাউকে কিছু না বলে এই কষ্টকর বিদায় নেয়াটা।
 
ভাবতে কষ্ট লাগছে - আমার মেঝ বোনের আদরের একমাত্র মেয়ে, আমার ভাগ্নি আজমেরী জাহান তাসনিম কখনোই মিস্টি কন্ঠে মামা বলে আমাকে আর ডাকবে না, সে প্রতিদিনের মজার মজার আর আপটডেট পোষ্ট করবে না, ছেলে জেইনকে নিয়ে নানা ধরনের হোম ভিডিও ক্লিপের স্টোরীও আর পোষ্ট দিবে না ফেইসবুকে.....। 
 
অনেকবার ভেবেছি- অনেকদিন হয় তাসনিমের সাথে সামনাসামনি দেখা হয়না, বহু ব্যস্ততার মাঝেও একদিন সময় করে মিরপুরে তাসনিমকে দেখতে যাব। আর যাওয়া হলো না, আর দেখাও হলো না আমাদের দু’জনার। এই জীবনে, আমাদের দেখা হওয়ার সম্ভাবনাও আর অবশিষ্ট রইলো না। আমরা একবারও চিন্তা করি না প্রিয়জনদেরকে মাঝে মাঝে দেখা দেয়া, একান্তভাবে সময় দেয়া কতটা প্রয়োজন। আফসোস, এভাবে অপূর্ণ থেকে যায় হৃদয় ডালির ভালবাসা, আদর ও স্নেহ, যা মৃত্যুর কারনে ছিন্ন হলেই নিজেদের অক্ষমতা প্রকাশ করি আর চোখের জলে সময়কে দোষ দেই। তাইতো আমি কখনই আর তাসনিমকে ফোনে কল করতে পারব না, আমি কখনই তাকে আর মেসেজ দিতে পারব না, ফেসবুকে তাকে আর কোন কিছু শেয়ার করতে পারব না! তবুও আমরা বেচে আছি বলে, চোখের জলে নীরবে মানতে হচ্ছে আজমেরী জাহান তাসনিম এর চিরদিনের জন্য এই চলে যাওয়া। ঘরে-বাইরে স্বজন মহলে সে ছিল একটি প্রিয় মুখ, সবাই তাকে খুবই ভালবাসতো। তাইতো বড় ভাই ও স্বামীর আইডিতে ফেসবুক পোষ্টে দেখা যায়, তাসনিমের প্রিয় মানুষগুলো অন্তরের ভালবাসা প্রকাশ করছে, প্রান খুলে দোয়া করছে, তার আত্নার মাগফেরাত কমানা করছে। তার মৃত্যুতে মন ভীষন ভারাক্রান্ত ও ব্যথিত ছিল, শোক কাটিয়ে কিছু লিখতে পারছিলাম না।
 
গত ২৯শে আগষ্ট,২০২১ তারিখ বিকেলে তাসনিমের মৃত্যুর খবরে পেয়ে আমরা সকলে খিরগাও তিলপাপাড়া থেকে শেষ বারের মতো তাসিনিম-কে দেখতে ও বিদায় জানাতে গিয়েছিলাম তার শ্বশুরালয়ে, স্বামী নাহিদ হাসানের ঢাকাস্থ মিরপুর, পল্লবী, পলাশনগরের বাড়ীতে। বাড়ীর অনতিদূরে স্থানীয় পলাশনগর জামে মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষনা করা হচ্ছিল- মরহুমার শ্বশূরের নাম, সাথে তার ছোট ছেলে নাহিদের স্ত্রীর মৃত্যুর সংবাদ ও মরহুমার জানাজা নামাজের সময়। শোক সংবাদ শূনে মহল্লাবাসী, আত্নীয়-স্বজন আসছে সমবেদনা জানাতে। সত্যি বিশ্বাস করতে হলো, আমাদের আদরের ভাগ্নি আজমেরী জাহান তাসনিম ইন্তেকাল করেছে। জানলাম, হাসপাতালের ডাক্তার বলেছে- সিভিয়ার পেটের ব্যাথা থেকে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং একই সাথে বমি হওয়ায় পর ‘সাডেন কার্ডিয়াক এরেষ্ট’ হওয়ায় হার্ট ফেইল করে তার অপ্রত্যাশিত মৃত্যু হয়েছে। ডাক্তারী ভাষায় যাই বলা হউক না কেন, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর আদেশে তার চলে যাওয়ার সময় হয়েছে বলেই পরপারের উদ্দেশ্যে এই মৃত্যু-যাত্রা। হঠাৎ মৃত্যুর নির্ধারিত উছিলাতে মা-মনি আজমেরী জাহান তাসনিম আত্নীয়-স্বজন কাউকেই কোন প্রকার কষ্ট না দিয়ে নীরবে এই পৃখিবীতে নশ্বর দেহ ত্যাগ করে চিরকালের জন্য পরপারের ঠিকানায় চলে গেছে অনন্তকালের জন্য। কষ্টদায়ক হলে সত্যি যে, এভাবেই সম্ভাবনাময় একটি জীবনের ও একটি অসমাপ্ত গল্পের যবনিকা হলো।
 
২৯শে আগষ্ট,২০২১ তারিখ দিবাগত রাতে পলাশনগর কেন্দ্রিয় জামে মসজিদে এশা'র ফরজ নামাজের পর মরহুমার জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হলো। মসজিদ সংলগ্ন পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত ছোট পরিসরের ওয়াকফকৃত পলাশ নগর কবরস্থানে রাত প্রায় ৯.০০ টার সময় মসজিদের ইমাম সাহেবের নির্দেশনা মতে মরহুমার ভাই সবুজ ও স্বামী নাহিদ লাশ কবরে রাখলো এবং মুসলিম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী অত্যন্ত সম্মানের সাথে মরহুমা আজমেরী জাহান তাসনিমকে সমাহিত করা হলো। পরকালের দীর্ঘ যাত্রায় সামিল হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলো আমাদের মা-মনি। সকলে মরহুমার কবরের উপর এক মুষ্ঠি করে মাটি দিলাম এবং সকলে মিলিত ভাবে মরহুমার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করলাম। 
 
আমরা আজ আবার সকলে মিলিত ভাবে মরহুমা আজমেরী জাহান তাসনিম এর রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া করি। প্রার্থনায় দোয়া করি, আল্লাহ যেন মরহুমার সকল জানা-অজানা গোনাহ মাফ করে দেন। পৃথিবীতে থাকাকালীন কল্যানকর ভাল কাজের জন্য আল্লাহ তাকে যেন পুরস্কৃত করেন। তার জীবিত স্বজনদের এই শোক সইবার ও সহ্য করার ক্ষমাত দেন। আল্লাহ যেন তার আত্নাকে জান্নাতে থাকার সুযোগ করে দেন। ইহ-জগতে তার রেখে যাওয়া একমাত্র ছেলে জেইন যেন সুন্দরভাবে বাবা, দাদা-দাদী, নানী, মামা ও স্বজনদের অবারিত প্রকৃত আদর, স্নেহ, ভালবাসায় বেড়ে উঠে। আল্লাহর ইচ্ছায় ছেলে জেইন যেন সুস্থ্যতার সাথে দীর্ঘ নেক হায়াত পায়। মায়ের শোক যেন তার জীবন চলার পথে বাধা হয়ে না দাড়ায়। আমাদের সকলকে যেহেতেু নির্ধারিত সময়ে আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে, তাই আল্লাহ তার মহান ইচ্ছায় মুসলিম হিসাবে আমাদের সকলকে যেন সম্মানজনক মৃত্যু দান করেন। আমীন।
 
- মেঝ মামা, এস. এম. নজরুল ইসলাম, খিলগাও (তিলপাপাড়া), ঢাকা।
 
 
 
 
 
২০২২ সালের ২৯শে আগস্ট ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে মেঝ বোনের মরহুমা কন্যা মা-মনি তাসনিমকে স্মরন করছি। আল্লাহ তোমাকে জান্নাত দান করুন..................
 
“নি:শব্দে তোমায় খুজি সব স্মৃতির মাঝে”
************************************
কবি : এস, এম, নজরুল ইসলাম।
রচনাকাল : ১১-০৯-২০২১খ্রি:।
 
দূরের আলোতে তুমি থাকো আকাশে
গো-ধুলি প্রান্তে, নীলিমা জুড়ে।
হৃদয় ঘরের প্রধান ফটকে অপেক্ষা,
হয়তো তোমার আসার কলিং বেল বেজে উঠবে।
 
এই বুঝি তুমি ফিরে এলে আবার….......
হৃদয় পথে ছুটে যাই বাড়ীর ফটকে,
নি:শব্দে তোমায় খুজি সব স্মৃতির মাঝে।
 
সম্মুখ নয়নে সকলই ফাকা,
কি করে ছবির এলবামে লুকিয়ে গেলে ?
তোমার জন্য পৃথিবী আজ নিয়েছে বিদায়।
 
তবু তোমার টুকরো ছায়ায়,
ডুবে আছে কত মিথ্যে আগুন,
অন্ধকারময়,কত স্মৃতি, কত সময়।
তোমার জন্য পৃথিবীতে আজকে ছুটির রোদ।
 
নিজেদের মাঝে তোমার খোঁজে,
শুধু আকাশ পানে তাকিয়ে থাকা,
নীলিমায় সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে
যদি তুমি হেসে উঠ আবার ফিরতি পথে।
 
জাগ্রত শ্রুতিতে, তোমার কোলাহল নেই,
বাধানো ফ্রেমে নির্বাক তুমি চারিদিকে নিস্তব্ধতা।
তাসনিম তুমি নেই, হারিয়েছ অনন্ত তিমিরে,
আজি সবকিছুতেই হৃদয়ের অব্যক্ত কষ্টের বারতা।
 
©কপিরাইট সংরক্ষিত (লেখক কর্তৃক)
ফটো ক্রেডিট: সায়মা শারমিন সূমি।
 

এপোলো-১১ মিশনে অংশ নেয়া চাঁদের মাটিতে ঘুরে আসা লাল মানুষ দেখার শৈশব স্মৃতি।

এপোলো-১১ মিশনে অংশ নেয়া চাঁদের মাটিতে ঘুরে আসা লাল মানুষ দেখার শৈশব স্মৃতি। আমার শৈশবের কথা বলতে গেলে আমি প্রায়ই নস্টালজিয়াতে ভোগি। আজকে আ...